আমারে আমি খুজিয়া বেড়ায় - আরিফ আজাদ
ভিন্ন ভিন্ন কিছু-আরিফ আজাদ
প্রথম প্রকাশ : একুশে বইমেলা ২০২২
.
নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মরণ একাধিক কেবল বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তালার জন্য।
.
পাঠকের মন্তব্য
[এক] বেলা ফুরাবার আগে আমার অনন্য বই এক আত্মান্নয়নমূলক। সাধারণ জীবনতান্ত্রিক নিয়ম টিপসগুলো এত সুন্দর আলোচনায় আমি ইতোপূর্বে কখনো পড়ি। জীবনমুখীগুলো খুঁজে বের করতে গিয়ে আমার ইতিহাসের বই থেকে আমি ইতিহাস নিয়ে শিক্ষা নিয়েছি। পশ্চিমের মাল্টা জীবনের বিপরীতে কীভাবে জীবনযাপন পদ্ধতি প্র্যাক্টিসিং- জীবন হিসাবে সাজানো যায়, তার অনুপ্রেরণা রয়েছে এই বইয়ে। আমাদের মনে জীবন– এক. দুনিয়ার জীবন, দুই. আখিরাতের জীবন। দুনিয়ার জীবনপদ্ধতি হচ্ছে আখিরাতের জীবন ইনভেস্টমেন্ট। মৃত্যুপরবর্তী ইনভেস্টের সিকিউরিটি নিশ্চিত করে দুনিয়াকে কেন্দ্র করে এবং উপজীব্য করে অতিবাহিত করা যায়, সে বিষয়ের প্রতিপাদ্য চিত্র বেলা ফুরাবার আগে। উদভ্রান্ত, উদাসীন জিনিষ পাটান থেকে মানুষের ফিরছে জীবন নতুন অনুচ্ছেদ। মুক্তির শীতল পরশে নতুন স্বাধীনতা বার্তা বইছে। জোট বেপর স্রোতনি বাঁকোয়া। জীবন এই বেপরোয়া স্রোতকে আমরা নতুন জাগরনে উত্তরালে। আসুক তবে আদর্শের সেই কাঙ্খ ঢেউ, আমরা হবো লীন।
–কাজী মালিকওয়াত হোসাইন
[দুই] সন্ধ্যেনামা মেঠোপথে সদাইপাতি নিয়ে শবস্ত পা-চালানো পথিকের মতোই আমাদের জীবন। সুরাস্তের পথ ফিরবার তাড়া! অনন্ত সওদা গুছিয়ে জীবনের অলিগলি ধরে বিরামহীন পথচলা… স্থায়ী জীবনের জন্য সওদা টুকুই পরকালের সম্বল। জীবন লেনাদেনায় সেটুকুন গোছাতে পাসই সফলতা। জীবনের সওদা গোছানোর অনুপম পাঠ নিয়ে লেখা হয়েছিল বেলা ফুরাবার আগে বইটি। হৃদয়ছোঁয়ার পাঠেই কাষ্ঠিকথিন হৃদয় জেগেছে প্রশান্তিময় গ্রন্থি বসন্ত। মনের বিষণ্ণতার প্রহরশের প্রাণসঞ্চঞ্চ কোশে করেছে অনুপম এই বইটি। বইটির দ্বিতীয় সিকুয়েন্স অনলাইনে আপলুত হয়েছি। বইটির দ্বিতীয় সিকুয়েন্সও পাঠকপ্রিয়। বিশ্বাসী তারুণ্যকে শেখ আসমানি শুদ্ধতার পাঠ। জীবনের উত্থান বৃদ্ধির দিকে ফিরদাউসের খুশবু। আমাদের চিত্রপ্রতিম হৃদয়ে এক পশলা পড়ে ঝরুক প্রিয় লেখকের এই সরীটি।
–জোবায়ের বিন বায়েজীদ
[তিন] এ ছোট ছোট অনেক অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে যে, সব জিনিসপত্র প্রকাশতাও না কিছু অপকারিতা জানা যায়। এই প্রথম কোনো বই পড়ে আমারও বেশ প্রযুক্তি হয়েছে। কিন্তু তাজ্জবের বিষয়– এই বই কোনো অপকারিতা খুঁজে পাইনি আমি। আপনার চমকপ্রদ ভাষাভঙ্গিতে লেখা বইটির নাম বেলা ফুরাবার আগে৷ বইটির ফিরিস্তি অধ্যাইফই ভোটি ফেলি ৬৪ নম্বর পৃষ্ঠার 'আমরা তো স্রে বন্ধু কেবলি। প্রবলে দেদারসে লাগলাম। কেবলমাত্র পাঠোদ্ধার করতে সংবাদ যে, আহ! যেমন জীবন পাঠ করছি তা তো মোটেও ঠিক নয়। এককথার পর দেওয়া হালালেশনশিপের প্রতি আমার অনেকদিনের যে একটা অলিমা ছিল তা ঠিক উবে গেল। অধ্যায়টি এত ভালো লেগেছে যে, তারপর আমি সম্পূর্ণ বইটি একনাগাড়ে পড়ে ফেললাম। বইটি সবারই পড়া প্রয়োজন। প্রধানত তরুণ-তরুণীদের। তাই আমি আমার সামথনুযায়ী এপর্যন্ত দুভোজন তরুণ-তরুণীকে বইটি হাদিয়া দিয়েছি। রবের কাছে একটাই আরজি–তিনি লেখকের হৃদয়-নিংগড়ানো এ কাগুঁ কথাকে তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার চাষাষ্ট মাধ্যম হিসেবে কবুল করে বোঝায়, আমি।
–কোহিনূর হাসান সাদিয়া
.
প্রকাশকের কথা
ইবলিশয়তানের সাথে মানুষের শত্রু চিরন্তন।
রন্দ্রে রন্ধ্রে রক্ষা বেড়ানো ইবলিস খপ্পর থেকে সম্পূর্ণরূপে পুলিশ থাকার সুযোগ আমাদের নেই। সে তার বারি ফাঁদ পেতে সর্বদা আমাদেরকে গন্তব্য থেকে বিচ্যুত করতে মরিয়া। সে আমাদের নবি-রাসুলদের প্রতিবেশী হতে চাই না, আমাদের নিয়ে সে অনন্ত জাহান্নামে পুড়তে চায়। ইবলিসে ফাঁদে পড়ে আমরা পদে পদে বিভ্রান্ত হই। ভাইই সাধারণ। ইবলিসের শক্তির সাথে ওঠা আমাদের ব্যবহার নিতান্তই ব্যক্তি, যদি না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা আমাদের সাহায্য করেন। আর আল্লাহ সুবহানা ওয়া তাআলা বান্দাকে তখন সাহায্য করেন, যখন বান্দা কামনোবাক্যে তাঁকে ডাকে। হৃদয়ের গভীর থেকে প্রকাশ করে।
সতর্ক নির্দেশিত একটি জীবনযাপন আমাদের রয়েছে, কিন্তু পরিতাপের বিষয়, শয়তানের মন্ত্রণায় পড়ে সেই জীবনপদ্ধতি বারবার আমরা চিটকে থেকে বৈশিষ্ট্যযুক্ত হচ্ছে। আমরা দেখতে দেখতে বা অন্যের জীবনপদ্ধতিকে বাঁচাতে শুরু করি। আমরা আমাদের অন্তরালেমারিচাকে বিশ্বাস করতে শুরু করি, আল্লাহ আর কোনোদিনও আমাদের ক্ষমা করবেন। আমরা আশঙ্কা করছি চিরতরে ফরমান লাভের সুযোগ পেয়েছি।
আত্মবিশ্বাস ফাঁটল ধরিয়ে শয়তান ভুলের আমার নিমজ্জিত করা। সময় বয়ে যায়, কিন্তু সতর্কতার নির্দেশিত অংশ আমাদের কাছে আসে না। পার্টি ফুরে আসে জীবনপ্রদীপে তেজ, কোল কোল নিভে যেতে পারে। মনে। আর যে ফুরায়ে যায় আয়ু, ঠিক স্তিমিত হয় জীবনের সকল নিয়ম, বন্ধ হয়ে যায় আশা এবং ভরসারও দরোজা।
কিন্তু এমন একটা ঘোর অন্ধকারে একটা মানবিক কি ব্যবস্থা করা যেতে পারে? তাকে উদ্দেশ্যর পাঠ পাঠের উদ্দেশ্য যে, তা পূরণ না করে সে চুকিয়ে জীবনযাপন করতে? বোধোদয়ের আলোক-রেখা কখনো কি উদিত হবে না তার চিন্তার আকাশে?
শয়তানি প্ররোচনায় বিউত অন্তরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে আর কী আছে দুনিয়ায়! যাদের হারিয়েছে সরল পথেরশা, আমরা তাদের অনন্ত গন্তব্যের রাস্তা, ডুবে আছে এক নিমগ্ন অন্ধকারে, তাদের অন্তরকে জাগিয়ে, অন্ধকারের গহবর থেকে তাদের টেনে যথেষ্ট পরিচর্যা এবং সুন্দর আহ্বান। অবজ্ঞা, তাকল্য আর তিরস্কারের বিরোধিতা নয়, তাদের ডাকতে হবে প্রেমের সাথে। তাদের ভুলগুলোকে ধরিয়ে দিতে হবে পরম যত্ন করে, যাতে তারা পড়ে ও লেখা না পড়ে।
আত্মভোলা মানুষকে ভয়ঙ্কর কোড বারবার, তাদের ভুলগুলোকে পরম যত্নের সাথে চিহ্নিত করে সবগুলো কোডের উপায় বাতলান লিখতে লিখতে আরিফ আজ মুনশিয়ানা বলেছে। আলহামদুলিল্লাহ, তার লেখা বইগুলো প্রতিনিয় জারো মানুষের হিদায়াতের অসিলা হচ্ছে, তরুণ-যুবা বৃদ্ধ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে আরিফ আজাদ তার আলোকে পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের সহ গোটা উম্মাহর জন্য বড়ো আশাব্যঞ্জক।
সাজিদ সরিরের যোগ্য আরিফ আজাদ প্রথম নিজের বলয়ের সময় বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের মাধ্যমে। বলাই বাহুল্য, এই কাজটাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাপুর বারকাহ তাকে সিক্ত করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই। বইটা আমাদের কত নারক-যুবতীর হিদায়াতের অসিলা করা হয়েছে, কতো দিশেহারা চারপা কঠিন তা স্বস্তি আর শান্তি নিয়ে নীড়ে ফিরেছে গণ ঊর্ধ্বে, আলহামদুলিল্লাহ। প্রকাশনার কথা বলা হয়, সেই পরিবর্তনের অনেক গল্প, আমরা আরও কাছে থেকে জানতে পারি এবং বারংবার জানার কথা জানাই।
শুধু পাঠকের বার বার ছিল ফুরার আগে বইয়ের দ্বিতীয় কিস্তি খুঁজে বের করা হয়। পাঠক পাঠকের কথাই বলে না, এই সার্কিয়ার কিস্তিগুলি সত্যিই প্রয়োজন। মানুষের সমস্যা ঠিক সামনের আনারগুলোকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আর ঘোষণার আহ্বান জানানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি যখন আসে, তখন তাকে মনে মনে মনে মনে হয়। এই জায়গায় লিখা আরিফ আজাদকে আমরা সফল বলতে পারি নিঃসন্দেহে। তিনি যে শব্দৈলী, যে ধারায় প্রকাশের প্রমাণ ফিরিতে উদ্বুদ্ধ তা পাঠকেরা ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন। ফলে এই ধারায় এই ধারায় নতুন সমাধান তাকে নিয়ে হাজির হবে, আরো নতুন পথের দ্বারকে উন্মোচন করবেন পাঠকদের সমালোচনার কারণে আমাদের সকলেরই উল্লেখযোগ্য। আমাদের সেই অভাব– একটি পরিবর্তনের নামকরণ এ বার ভিন্ন কিছু৷
বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের পরের কিস্তি সংকলন ভিন্ন কিছু৷ কারণ এর গত কিস্তির আলোর বিষয় দিদি, বর্ণনার ধারা, ভাষা, শব্দশৈলীর প্রয়োগ সম্পর্কে পাঠকেরা অবগত আছেন, এই কিস্তির চাই তাই নতুন করে কিছু নেই। আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি, এই কিস্তিও পাঠকেরা বইয়ের পাতায়, পরতে দেখতে পাবেন। এ-ও বলতে পারি, আমি আমার মনের পক্ষে লিখতে হবে।
এই সার্কিট লেখক আরিফ আজাদ লেখক সাজিদ' তৈরির মিশন। আলহামদুলিল্লাহ, সার্বভৌম পাকিস্তানি পাঠকদের, আনন্দ আর আবেগের ফল্গুধারা আমরা বিশ্বাস করি সত্যতার সঠিক সত্য আপনি। আমাদের মহান রব তার এই মিশন কবুল করে নিন, তারকে ভরসা করে কামিয়াবি করুন এবং তার কাজগুলো পরকালে তার নাজাতের অসিলা করে নিন–কায়মনোবাক্যে এই প্রার্থনা-ই করি মহাহিম দয়াময়ের কাছে। বইটির সাথে দল হতে সমকালীন পরিবার সবিশেষ আনন্দিত আর আপ্লুত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমার ভুলত্রুটিগুলোকে ক্ষমা করে আমাদেরকেও কবুল করেন। আমিন।
.
লেখার কথা
'জীবনের জারণে' সিরির প্রথম বইটি বার বার ফুরাবার আগে। বইটা আমার কতো যে প্রিয় আর বইটা অনলাইন গত দু বছর কতো কতো কারণে জন্ম হয়েছে, তা বলে শেষ করার মতো না। কশু শুকরিয়া অনেকাংশে সুবহানাহু ওয়া তালার এই অপার নিয়ামতের কথা বলতে হবে, তা আমার জানা নেই; কিন্তু তাঁর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে শেষ করতে পারা আদৌ কি সম্ভব? আলহামদুলিল্লাহ।
বেলা ফুরাবার আগে বইটা যখন লিখি, তখন আমার ধ্যান-জ্ঞান সব যেন বইটাকে ঘিরেই। আমি স্বপ্ন দেখতাম–আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইচ্ছাতে এই বই যুবক-যুবতীদের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। তারা সালাতের প্রতি উদগ্রীব হচ্ছে, হারাম রিলেশান ছেড়ে দিচ্ছে, ফোন মেমোরি থেকে ডিলেট করে দিচ্ছে সমস্ত গান, যা না শুনলে রাতে তাদের ঘুম হতো না। ফোনের গ্যালারি থেকে তারা মুছে দিচ্ছে সেসকল ছবি আর ভিডিও, যা তাদের কু-প্রবৃত্তিকে তৃপ্ত করতে একদা। তারা বিনয়ী হচ্ছে, সময়ের গুরুত্ব বুঝছে, তারা সুন্নাহ আর নফল পালনের দিকে ঝুকছে, ফজর আর তাদের কাযা হচ্ছে না–বইটা লিখবার প্রাক্কালে এসবই ভাবতাম আর আল্লাহর কাছে অনেক দুআ করতাম। আল্লাহকে বলতাম, তিনি যেন আমার স্বপ্নগুলোকে সত্যি করেন আর বইটাকে কবুল করেন।
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর বারাকাহ আর প্রকাশ্য সাহায্য যে কী জিনিস, তা আমি বরাবরের ন্যায় আবারও উপলদ্ধি করলাম। বেলা ফুরাবার আগে বইটাকে নিয়ে আমি যে যে স্বপ্ন একদা মনে মনে আঁকতাম, হাঁটতে হাঁটতে যে দৃশ্যগুলো দোলা দিয়ে যেতো আমার হৃদয়ে, সেসবকিছুই আমার রব বাস্তবে পরিণত করেছেন। গোটা বাংলাদেশ তো বটেই, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিশাল একটা অংশের মাঝে বইটাকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, যে আগ্রহ আমি দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়া, মেইল ও ইনবক্সে বইটা পড়ার পর যে সমস্ত পরিবর্তনের কথা আমি শুনেছি মানুষের কাছ থেকে, তা দেখে আমি বিশ্বাস করি যে, আমার মহান রব আমার দুআগুলো কবুল করেছেন। তিনি বইটাকে যুবক-যুবতীসহ অনেক অনেক মানুষের পরিবর্তনের অসিলা হিশেবে গ্রহণ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
বইটা প্রকাশের দুবছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ বইটা পড়ে তাদের পরিবর্তনের কথা জানাচ্ছেন। এ যে কী মধুর ভালো লাগা, বর্ণনার জন্য যথাযথ শব্দ দুনিয়ার কোনো ভাষাতে মজুত নেই। আলহামদুলিল্লাহ!
বেলা ফুরাবার আগে বইটাকে আমি বলেছিলাম ‘সাজিদ’ তৈরির মিশন। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ পড়ে যারা সাজিদ হতে চাইবে, তারা যখন জানতে চাইবে সাজিদ হতে হলে তাদের কী কী করতে হবে, আমি বলেছিলাম তারা যেন বেলা ফুরাবার আগে বইটাতে চোখ বুলায়। আমি ভীষণভাবে বিশ্বাস করি–আত্মিকভাবে। নিজেকে পরিশুদ্ধ করা না গেলে কখনোই পরম পবিত্রতার সন্ধান লাভ সম্ভব নয়। আত্মার সেই শুদ্ধতার দিকে যুবক-যুবতীদের ধাবমান করতেই আমি বইটার কাজে হাত দিয়েছিলাম। যেহেতু যুবক বয়সের সমস্যাগুলোর ভেতর দিয়ে আমি নিজেও যেতাম এবং এখনো যাই, তাই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা আমার জন্য কঠিন কিছু ছিলো না। সেই সমস্যাগুলোর পরতে পরতে আমি হাঁটতে চেষ্টা করেছি এবং বের করে আনতে চেয়েছি সেসবের সম্ভাব্য সবচেয়ে সঠিক চিকিৎসাটাই।
অনেক পাঠক আমাকে বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের দ্বিতীয় কিস্তি আনার অনুরোধ করেছেন। যুবক বয়সের যেহেতু সমস্যার অন্ত নেই এবং তা ক্রমবর্ধমান, তাই আমারও খুব ইচ্ছে ছিলো এই ধরণের আরো বই নিয়ে কাজ করার। আলহামদুলিল্লাহ, মহান রব আমার সেই বাসনাটাও পূরণ করেছেন। এবার ভিন্ন কিছু হোক নামে এই সিরিজের পরের বইটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা প্রকাশের সুযোগ দিলেন আমাকে। আমার রবের দরবারে অফুরান কৃতজ্ঞতা।
এই ভিন্ন কিছু বারবইটা বেলা ফুরা আগে বইয়ের পরের কিস্তি। সংখ্যা বই প্রায় একই ধাঁচে লেখা। আমি চেষ্টা করেছি অধ্যায়কে জীবনঘনিষ্ঠ রাখতে, যাতে পাঠকে পড়ার সময় নিজের অবস্থা কল্পনা করতে পারি। বইটা হাতে নিয়ে দেখেছি, তার জন্য আমার মনে হয় বইটা আমি খুঁজে বের করছি এবং বইয়ের কথার কথাগুলো আমি তার পাসওয়ার্ডকে জোর দিয়ে বলতে চাই। পাঠকের চেষ্টা করেছি যাতে বিশৃঙ্খল না হয়, সে দিকে সতর্ক থাকার চেষ্টা আমি, আলহামদুলিল্লাহ।
এই বইতেও পাঠকেরা অনেক সমস্যার সমাধান পাবেন এবং আরো পাবেন। অনেক আশার আলো। আমি একজন মানুষ, তাই আশা বাঁচাতে সৃষ্ট দেখতে আমি ভালোবাসি। আর কেন-বা নিশারাবাদী হবো? অবিশ্বাসীরা ছাড়া আর ওয়ার্করা রহমত থেকে নিরাশ হয়?
বেলা ফুরাবার আগে বইয়ের মতো এই বই নিয়ে আমার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। অনুরোধের জন্য প্রার্থনা-তিনি এই বইয়ের কবুল করেন আর আমার নাজাতের অসিলা দেন। তিনি আমাকে সর্বদা মাটির মানুষ থাকার সুযোগ দেন। সমস্ত অহংকার, রিয়া আর বড়ো তিনি আমাকে মুক্তা থেকে।
মনের মতই আমার পাঠকদের কাছে অনুরোধ-পড়া শেষ হলে বইটা নিজের কাছে পেতে না। আপনার নিকটাত্মীয় বন্ধু, ভাই-বোন এমন জন্য বইটা হস্তান্তর করবেন, যার জন্য বইটি আপনি চাইবেন। পাঠকের জন্য আমার অফুরান সকল ভালোবাসা। প্রেম আর জ্ঞানতা এই বইটার লেখক যারা বিভিন্নভাবে শ্রমজীবী। কৃতজ্ঞতা সমকালীন প্রকাশের প্রতি, বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে বন্দোবস্তের ভারা গ্রহণের জন্য। আল্লাহ সুবনা তাআলার কাছে আমাদের জান্নাতের সবুজ উদ্যানে একত্রিত করেন। আমিন।
ওয়ামা তাওফিক্বী ইল্লাল্লাহ।
আরিফ আজাদ
.
সুচিপত্র
আপনি আমি খুঁজছি বাডই
যে সুতোয় বাঁধা জীবন
গাহি নতুন গান
পতনের আওয়াজ পাওয়া যায়
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর
কখনো ভুল হলে
বন্দিশিবির থেকে
যদি তোর ডাকে কেউ না আসে
যে বৈশিষ্ট্য বলুক পিছে
আমাদের জীবনের বন্ধ দুয়ার
খেলাঘর পাতা আছে এখানে
হৃদয়ের জানালাটা যোগদান না
জীবন কম্পাস
ভালোবাসা ভালোবাসা
সমুদ্রের সাধ
এই ভিন্ন কিছু
.
০১। আপনি আমি খুঁজছি বাডই
এক.
যাপিত জীবন বর্ণনা বলি– আমরা যখন রোগে-শোকে ভুগি, যখন শরীরে আমরা করি কোন রোগের উপস্থিতি তখন আমরা ডাক্তারের কাছে উপস্থিত। ডক্টর, বলি আমাদের অসুবিধের আদ্যোপান্ত। তিনি আরো চেষ্টা করেন আমাদের অনুরোধতা। প্রয়োজনে আমাদের শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন। রোগ নির্ণয়ের পর আমাদের ও জীবনযাত্রার একটা ছক দিয়ে তা পালন করা কঠোর হুঁশিয়ারিও প্রদান করেন।
পরীক্ষায় অকার্যকর হলে আশানুরূপ ফলাফল না হলে আমরা ছাটে শিক্ষকদের কাছে। তাদের কাছে–যারা আমাদের আরও বেশি যোগ্য। কৃতকার্যতার অথবা ভালো ফলাফলের পথ বাতেলে যারা সব শেষ পারদর্শী, তাদের দুয়ারে ধরনা দিই আমরা। ভালো ফলাফলের বাজার বাতলে তারা ধন্য করেন। কৃতকার্য হলে যে পথ ধরতে হবে, যে শক্ত-কথিন সাধে একই রকম হবে–সেই পথ তারা মুখ বুজে হতে পারে। ভ্রমণ জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে ট্র্যান্স, যখন ফিকে হয়ে আসে সারা জীবন, তখন আমরা খুঁজি, যে রংঙে আমাদের আশা আলো দেখাবে। এমন একজন দেখতে–আমি দেখতে দেখতে আমরা খুঁজে পাবো পাবো, যার জীবনের লক্ষণ চিহ্নিত করে দপ করে জ্বলে উঠে নিভুনিভু জীবন-প্রদীপ৷
যাপিত জীবন শূন্যতাগুলোকে উত্তম প্রতিস্থাপনের বেলায় আমাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা। যখনই কোনো শূন্যতার বলয়ে আমরা ঘুরপাক খাই, আমাদের অবচেতন মন তার নিজের মতো করে সেই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করে। মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য এটি। মানুষ শূন্য স্থান পছন্দ করে না বলে তা পূরণ করে সে সবিশেষ তৎপর হওয়া।
দুই.
রোগ হলে আমরা ডাক্তারের কাছে ছুটি, পরীক্ষায় ভালো ফল লাভের উপায় জানতে ধরনা দিই যোগ্য শিক্ষকের কাছে। বিষিয়ে ওঠার জীবন যাতানা থেকে মুক্তি পেতে আমরা পাগলের মত খুঁজে বের করতে পছন্দের ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে পারি, অথবা মাধ্যমে, যা-কিছু আঁকড়ে ধরে আমরা সক্রিয় থাকার চেষ্টা করতে পারি; তবে যদি প্রশ্ন করি নফসে তাড়না– বেঁচে থেকে কখনও কি আমাদের মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে? যে কুপ্রবৃত্তির বলয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে সেঁটে আছে, সেই বলয় আবার কখনো কি হৃদয়ে দানা বেঁধেছে অনেকখানি সৃষ্ট?
শরীরে রোগ বাসালে তাকে আমরা সমস্যা। পরীক্ষায় অকার্য্যক ডাকে অপ্রাপ্তি বলে। জীবন ছন্দপতনের নাম দিয়েছি হতাশা; কিন্তু কুপ্রবৃত্তির যে জালে আমি কথোপকথন ধরে নিয়েছি, তার জন্য কোনো নাম পড়েছি কখনো অভিধা কি আস্থাশীল একবারও?
যে তাড়না আমাকে চেষ্টা চালিয়ে আত্মহত্যার নৈকট্য থেকে, যে ধোঁকা আমাকে গোমগ্ন করে প্লেগ অবাধ্যায়, যে আত্মপ্রবঞ্জন নিয়ন্ত্রণে জীবনের সোনালি সময়, সেই ঘোর অন্ধকার থেকে পালটা কি আমার মন চেয়েছে?
কেন আমি বারবার বন্দি হয়ে নফসের শকেলে? কেন কুপ্রবৃত্তির মায়াজাল ভেদ করা আমার জন্য দুরুহ পার হওয়া? কেন বৃত্তের একই কেন্দ্রে আমার নিত্য ভুলের বিচরণ? যে উদ্দেশ্য দুনিয়া উদ্দেশ্য আমারমন, সেই থেকে আমি কেন আগাতে আমার বিচ্যুত? রুহের প্রস্তুতি মহাহিম আল্লাহ যখন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, 'আমিই কি নই?', তখন আমি মহোৎসাহে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে, বিস্ময়খানো কণ্ঠে বলে, 'অবশ্যই, তুমিই আমার রব।' প্রথম আর পরমর কথা?
এই যে কুপ্রবৃত্তির বাঁধনে আমি বন্দি হয়েছি? কোন উপায়ে আমি নিজেকে মুক্ত করতে পারবো এই চোরাফাঁদ থেকে? কোন পথ নিহিত আমার মুক্তি? কিভাবে আমি সেই জীবনের শেষ মহাতার বাঁকে ফিরতে পারবো–এসব উদ্দেশ্য নিয়ে যদি পাই ভাবতে, আমার নিয়ে আলোচনার আলোচনার সমাধান। যখনই আমি বৃত্তাকারে ঘুরপাক খাবো, তখন যদি নিবিষ্ট মনে করি আমি মনে করি ওয়ার্ক কালাম–এই আয়াতের দিকে, আমি যেতে পারি আমার কাঙ্খিত সেই সমাধান। আল্লাহ সুবাহনাহু ওয়া। তাআলা বলল-
তাদের পরে এলো এমন এক অসৎ জাতি, যারা সলাত করলো এবং কুপ্রবৃত্তি চেষ্টা করলো(2)
আমি যদি বুদ্ধিমান হতে পারি এবং আমার ভুল আর উপলব্ধি ক্ষমতা যদি ফুরায় না যায়, তাহলে এতক্ষণে আমি ক্ষমতা গেছি, আমার শূন্যতাটা প্রকৃতপক্ষে বোঝা যায়। কোন জায়গায় এসে আমার জীবনমকে গেছে, কোন কেন্দ্রে এসে আমি সত্য বিভ্রান্ত হয়েছি, কোন ভ্রান্তির মায়াজালে আমি ইন্টেন্টে পড়েছি তা এতক্ষণে আমার মনে পড়ার কথা।
হ্যাঁ, আমি পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথাই বলি। দর্শক তো মানবজীবনের ছন্দ। এই ছন্দের শূন্যতাই তোমায় ছন্দপতন ঘ. এটা আমার কথা নয়, স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালার কথা। তিনি ও চ্যাট অভিশপ্ত এক জাতির উদাহরণ টেনে বলেছেন, এমন এক জাতি এলো, যারা সালাত বিনষ্ট কর এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করলো। আল্লাহ তো বলতে পারতেন, তারা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ কর এবং সালাত বিনষ্ট কর। কিন্তু তিনি সেভাবে বলেন। তিনি আগে সালাত বিনষ্টের কথা বলেছেন এবং বলেছেন কুপ্রবৃত্তির নীতির কথা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা অভিশপ্ত এক জাতির বর্ণনা দিতে গিয়ে আমাদের জানাচ্ছেন যে, তারা সালাত বিনষ্ট করেছে এবং কুপ্রবৃত্তি অনুসরণ করেছে। তারা কিন্তু কুপ্রবৃত্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে। আগে তারা সালাত ছেড়েছে। ছেড়ে দেওয়াতে তারা কুপ্রবৃত্তির দিকে আকৃষ্ট হয়েছে এবং এর ফল জন্য তারা অভিশপ্ত। মোদ্দাকথা–সালাতহা বান্দা ও শয়তানের একটা শক্ত বেষ্টনী। একটা মজবুত দেওয়াল। বান্দা যখন নিজেকে সালাতের সাথে যুক্ত না, তখন শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। যে বান্দা নিজেকে সালাতে হাজির করা, শয়তানের তীর সেই বান্দাকে দেখতে পারে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেই বান্দাকে তাঁর নিরাপত্তা-বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ভাবছেন, এটা কি আমার কথা? প্রচুর না। আল্লাহ সুবাহনাহু ওয়া তাআলাই বলেছেন-
সালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে নিশ্চয়তা দিয়েছে।[3]
অনেক বছর ধরে যতক্ষণ সালাত বিধান বর্মটা সত্যিকার অর্থে আমার দেহের সাথে থাকবে, ততক্ষণে আমাকে নির্দেশ করতে সাহায্য করতে হবে। সমস্ত বার্তা এই বর্মে একইভাবে ধূলিসাৎ হবে। অথবা সালকে আমরা একটা ব্যবস্থা-বলয়ের সাথে তুলনা করতে পারি। যতক্ষণ আমি এই বলয়ের থাকবো, ততক্ষণ আমার দ্বারা কোনো মন্দ কাজ সংঘটিত হবে না। যখন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়াবে, তখন যেতে মন্দ কথা, মন্দ ভাব আমার অন্তরে আর উদিত হতে আমার অন্তরে না উদিত অনুভবে আর উদিত হতে আমার অন্তরে সে সবের সলতে আমি বেখেয়াল হবো না। যখনই মন্দ চিন্তা আর মন্দ ভাবনা অন্তরে নিতে চাইবে, তখন আমার সতর্কতা অবলম্বন করতে আমার সে সবের অনুপ্রেরণা এবং অনুশোচনা করতে হবে।
কিন্তু যখন আমি সালাত ছেড়ে দিয়েছি, তখন সালাতের মনে আমার হৃদয়-মন উদাসীন হয়ে উঠবে, তখন আমার অন্তরে আমাকে অনেক কুপ্রবৃত্তির হাওয়া। শুধু আমার সাথে সালাতের তখন সম্পর্ক করা হয়েছে, সেহেতু কুপ্রবৃত্তির আশরাকে প্রতি হৃদয়ে উদিত মন্দ ভাবনা আর মন্দ চিন্তাকে ঝেড়ে ফেলার মতো যথেষ্ট শক্তি আর থাকতে হবে না। আমাকে অন্তরে জেঁকে। বসবে, সেই হাওয়া আমাকে বিফল, বিভ্রান্ত ও বসবে।
সেই অভিশপ্ত জাতি, উদাহরণে বহানাহু ওয়া তাআলা সুতে টেনেছেন, তাদের কথাই ভাবুন। তারা মধ্যবিত্ত করলো তাদের সালাত। কী কী? কুপ্রবৃত্তি তাদের অন্তরে জেঁকে বসলো। কুপ্রবৃত্তির সেই মায়াজাল ভেদ করে তাদের আর হওয়া আসা না। এই দ্বৈত পদ অঞ্চলের ফলে তারা পরিণত হয়েছে অভিশপ্ত এক জাতিতে, বিভাকে কিয়াম পর্যন্ত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা উদাহরণ হি পেশ করেছেন। কী এক ভয়ানক মনে হয়, ভাবা যায়!
এই চলুন আমরা আমাদের পছন্দ করি–কেন আমরা শয়তানের ওয়াসওয়াসা কাটিয়ে উঠতে পারি না? কেননাফ নকে দমিয়ে রাখা আমাদের ব্যবহারস করা হয়েছে? কুপ্রবৃত্তির কাছে কেন আমরা বারংবার পরাজিত, বল, শৃঙ্খলিত হচ্ছ? কেন রবের আহ্বানে সাড়া দিতে আমরা অপারগ? মনের সুরলহরি কেন আমাদের অন্তরে প্রশান্তি দিতে পারে না? উত্তরের জন্য চলুন দৃষ্টি ফেরাই আমার জীবনের দিকে। আত্মসমালোচনার আয় নরকে তুলে ধরতে পারি– আমি কি আমার সালাত ঠিক রাখতে চাই? আমার সালাত কি সেভাবে হচ্ছে, যেভাবে তা হলে সত্যিকারের সাল হতে পারা?
যদি আপনি নফসে ধোঁকায় থাকেন, যদি কুপ্রবৃত্তির কালোছায়া গ্রাস করে থাকে আপনার অন্তরে, তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তরে আপনাকে বলতে হবে, আমি আমার সালাত ঠিক রাখতে পারি। সালাত বারে আমি সমাধান অলস, অথবা আমার সালাত কোন শক্তি নেই। আপনি যেভাবে প্রণয়ন সান্নিধ্যে সালাতে করতে হয়, তার আমি আপনাকে করতে পারি না।
অন্য, এককথায় আপনি সালাতকে বিনষ্ট করছেন। নিশ্চিত সালাতে হাজিরা হচ্ছে না, অথবা উপস্থিত তা দেখতে গা বাঁচানো হাজিরা। সেই হাজিরায় জায়নামা আপনার দেহ দাঁড়ায় বটে, মন দাঁড়ায় না। যে সালাতে দেহ আর মনের মানুষ সম্মোধন না হয়, সেই সালাত শারীরিক ব্যায়াম বৈ আর কিছু না হয়।[4]
তাহলে উপায়? কোন পথে ফেরা যাবে গান? কোন উপায়ে জীবনকে নতুন ছন্দে মাতানো যাবে আবার? কোন সে জিয়নকাঠি, যার টানে জীবন ফিরে আসে? মরা গাঙে বসন্তের জোয়ার? উত্তর আছে একই জায়গায়, ঠিক সেই জায়গা থেকে শূন্যস্থান-সালাত। কাছের দিকে বারবার পাঠ করুন-
'তা পরে এলো এমন এক অসৎ জাতি, যারা সাল বিষ্ট কর এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ কর।'[5]
তারা অভিশপ্ত হয়েছিল, জীবন ছন্দে হারিয়েছে কেবল সালাত বিনষ্ট করে। বিস্তৃত করা তারা আপনা আপনি ক্ষমতায় কুলকুপ্রবৃত্তির মায়া বিবরণে। সেই বৃত্ত থেকে তারা আর বেরোতে পারে। তারা হয়েছে পথভ্রষ্ট। আজ আমরা যারা ছন্দ হারিয়ে হাপিত্যেশ করছি, জীবনের পথ মর্হের হয়ে উঠছে তাদের সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য, আমাদের কি সময় হবে সালাত চিন্তা করার চিন্তা করার? যাপিত জীবন রুটিনে সালাত লিটার 'অবশ্যকব্য' করে নেওয়ার মতো দেখতে দেখতে কি আমরা হতে পারি না? বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ না করার জন্য আমাদের জন্য সহজভাবে পড়ে যাবে, ঠিক সে সালাতের উদাসীনতা মীর করার জন্য আমাদের জীবন ছন্দ, সকল ময়তাকে। তাই, কুপ্রবৃত্তির ধোঁকার আর হাবুডু বুবু নয়। আর নয় রোজকার অগোছালো জীবন। আজ, ঠিক এই মুহূর্ত থেকে চলুন আমরা এক অন্য মানুষ। আমাদের জীবনকে আমরা রাঙিয়ে তুলি সালাত দিয়ে। আর রাঙিয়ে তুলি আমাদের দুনিয়া-আখিরাত–টোই।
তিন.
মনে কি হচ্ছে যেটা, কোনো সফলতা নকশা না? মনে হচ্ছে যেখানে যাচ্ছে, সেখানেই আপনাকে বরণ করার জন্য ওত পেতে আছে? পরীক্ষায় আশানুরূপ সফলতা আগামীকাল না, বারবার লোকসান গুনেছেন, একটা ভালো চাকরির আশায় ব্যবসা করার পর দিন অপেক্ষা করার প্রহর গুনেছেন, কিন্তু কোনো একটা কাজ হচ্ছে না বন্দোবস্ত না। জমি থেকে বারাকাহ চলে গেছে। আয়-রোজগারে খুব মন্দা পরিস্থিতি। এমন হয়?
ভাল, কখনো কি কখনো বাস্তবে, কেন এমন হচ্ছে? কেন আপনি বারবার চালু করছেন? কেন সফলতা হাতছানি দিয়েও বাধা দিচ্ছে? কেন আপনার নিজের রাজ্যে সেই বারাকাহ, সেই স্থায়ীত্বশীলতা আপনি এখন কী জানেন? কেন আপনার ব্যবসার পুজি, শ্রম জিনিষ বিনিয়োগের চেয়ে ভাল দেখা, আপনি দেখতে দেখতে দেখতে না তার সফল? কখনো খতিয়ে দেখায় শূন্যতাটা বাস্তবে?
আপনার এই একটির কারণের উল্লেখ পাওয়া যাবে। আল্লাহ সুবাহনাহু ওয়া তাআলা বলেছেন-
আর (আমার রব) আমাকে আমার মিউ প্রতি অনুগত; এবং তিনি আমাকে অবাধ্য, হতভাগ্য করেন।[6]
এর কথাগুলো ইসাপাস সালামের, যখন তিনি আমার কোলে থাকবেন তার গোত্রের অস্তিত্বের সাথে কথা বলেছেন। এই আয়াত তার গোত্রের লোকদের উদ্দেশ্য করে লেখক বলেছেন, আমার রব আমাকে আমার প্রতি অনুগতভাবে তিনি বলেছেন। বিবাহ অনুগত মধ্যে কি? আমিন দায়িত্বশীল, আমার প্রতি দায়িত্বশীল ব্যক্তি। অবাধ্য নাইট, মিড দেখাল করা, মিনি প্রতি রূঢ়, বিরূপ আচরণ করা, মিনি মনোবাঞ্ছ, মনোবাসনা পূরণ করা মিউ অনুগত গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। ঠিকই ইসাস সালাম বললেন, তিনি বানানি অবাধ্য, তাভাগ্য।
আয়াতের অংশ। প্রথম অংশে মিউ অনুগত অবস্থান কথা, দ্বিতীয় অংশে অবাধ্য নাক্ষা এবং তা ভাগাভাগা না কথা।
এই 'আয়াত' বলতে আরবি 'শাকবিইয়া' ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ-ফলক, ব্লাক, অসফল। সাফল্যের অভাব এই শব্দের একই নম্বর নম্বরে একই সুরার ৪ আয়াতে, যেখানে যাকারিয়া সালাম দুআরের মধ্যে বলেছেন, হে আমার রব, আমি তোমাকে কখনো ডেকে বনিনি।
আয়াতটি থেকে একটি লক্ষ্যণীয় যে–ঈষের সাস সালাম মিউঅনুগত দাবি উত্থাপনের পরেই বললেন, তাকে বা অসফল চেষ্টা করা হয়নি। তাহলে, মিউ আনুগত্যের সাথে সফল না-হওয়ার একটা সম্পর্ক প্রতীয়মান হচ্ছে না? কবিতা হচ্ছে এই আয়াতের বার্তা।
আপনি যদি আপনার জীবনের দিকে তাকানো হয়। এই যে জীবন আলোচনার অসফল শরাছড়ি, বইতার সকরুন গল্প, এই পাতাটা ঠিক কী কারণে আপনার ওপর নিপতিত হয়েছে, তা কি খুঁজে বের করা উচিত নয়? আপনি যদি ব্যবসা করেন- মিউ এর সাথে আপনি কি আচরণ করেন? আমার মনে মনে অনেক, আমার অধিকার আপনি কি সর্বদা তৎপর ছিলেন বা আছেন? আপনি কি মিউয়ের সাথে মিলিত কথা বলা সিদ্ধহস্ত? তার বিবেচনা, তার আবদারকে অগুরুত্বপূর্ণ মনে করে আপনি কি উড়িয়ে দেন? আপনি কি দেশের চাহিদার যথেষ্ট মূল্যায়ন করেন?
এই প্রশ্নের উত্তর যদি না হয়, আজই আপনার কাছে ফিরে যেতে হবে। যে ভুল আপনি গৌরধারিণী মিনি আপনার সাথে আপনাকে, যে শোভন আচরণে আপনি বারবার ক্ষত-বিক্ষ করেছেন তার অন্তরে, সমস্ত কিছুর জন্য তার কাছে করজোড়ে ক্ষমা করেন। পা ধরে ধরেনুন। ছোটোবেলায় যেভাবে তার আঁচল-তলে লুকোতেন, তার গলা দলে দলে, ঠিক সেভাবে। বিশ্বাস করুন আপনার ব্লগার ঠিক এখানেই লুকিয়ে আছে। এখানে এসেই আপনি বারবার হেরে যাচ্ছেন। আপনার বারাকাহর যে ঘাটতি, তার শুরুটা ঠিক করা।
আমি একজন তার অবাধ্যতা বিষয়টা খুবই খারাপ ডেকে আনতে পারে একটা দৃষ্ট আমরা নবিজি উত্তোলন ওয়াল্লা মেরে হাদি পাই। হাদিসে বনুসরাইল যুগের একজন নেককার বান্দার কথা বলতে গিয়ে নবিজি অফিসার পদ ওয়ান সাল্লাম বলেন, 'বনু ইসরাইল সম্প্রদায়ে ইউজার গৌরব অত্যন্ত নেককার একজন লোক ছিলেন। সতর্ক ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য তার উদাহরণ একটি জায়গা এবং সেখানে তিনি তালিকা ইবাদতে মগ্ন তৈরিন। গত বছর এমন এক সময়ে যখন তার ইবাদতে মগ্ন, তার মা এসে তাকে ঘর থেকে ডাকে। আমার ডাক আমেরিকান তিনি ইবাদত বাদ দিয়ে ভিডিওটি আমার কাছে ছুটে যাবে, না ইবাদত সম্পূর্ণ করে তারপরে আমাকে ডাকে সাড়া-এ নিয়ে ভারি ডোটানায় পড়ে পড়তে হবে। শেষপর্যন্তবাদ সম্পূর্ণ করে তারপর আমার কাছে যেতে যেতে তিনি মনের কথা বললেন। দ্বিতীয়বার এসে তার মা তাকে ডাকলেন, তখন ইবাদতে তার সাথে তার সাথে মিলন ডাকে সাড়া দিতে না। তিনবার আবারও তার মা এলেন এবং তাকে উত্তর ডাকলেন। তৃতীয়বারও ছেলের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে মাথুন হয়েছে বলে বসলেন, ইয়া আল্লাহ, কোনো এক নষ্ট নারীর মুখ দেখার আগে আমার মৃত্যু হয় না।'
যুগের ধর্মপ্রী এবং একনিষ্ঠ ইবাদত-বন্দেগির সুনাম তখন চারি দিকে উত্তেজিত পড়লো হুড়মুড় করে। তার দুনিয়া-বিমুখতা, খোদাভীতির প্রশংসায় গদগদ। সে সময় সমুদ্র এলাকায় এক পতিতার আগমন ঘটলো, পুরুষদের সাথে যে সম্পর্ক করবে। লোকের বৈধ ইউজার ইউরোপের গল্প সে বললো, 'ও এই কথা! তোমরা দেখো, আমি যদি তার কাছে তার কাছে, আমাকে তার ধর্ম কর্ম শিকেয় বাধা সৃষ্টি করবে।
পাতিতাই ধর্ম–যুজুর সমাজ যত কর্ম, যত আল্লাহ করওয়ালা, তার রূপের কাছে যুবরাজকে হার মান হবে। সকলে তোকে, 'তাই করে? তো যাও না, গিয়ে পৌর ইউজারেকে গিয়ে বলতে বলতে।
সেই পতিতা জুরেজের কাছে এলো এবং চেষ্টা করলো সেজুরেজেকে আকৃষ্ট কর; কিন্তু তার জন্য বান্দা ইউজারকে সে কোনো প্রলুব্ধ করতে পারলো না। যারপরনাই বান করা।
বিশ্বযুজুরকে প্রলুব্ধ করতে না পারার বেদনা তার প্রবল হয়ে উঠলো। অপকুল শোধ নিতে সে বেশ কদর্য এক অন্তরে অবস্থান করা। এক রাখা তার সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় এবং অনৈতিকভাবে এক সন্তানকে ধারণ করে। যখন সেই সন্তানের জন্মস্থান ছিল, তাকে সে সম্পর্কে বললে পুরোটাই জানালেন, যাও যাও, ইউজুরেজ আমার সঙ্গে ব্যাভিচারে দল। এই যে শিশুকে দেখে, এটা যুবকের সন্তান।
বলা হয়েছে, বাহুল্য–জনদেরকে হতবাক হওয়া কঠিন এবং মহিলার এমন চাক্ষুষ মুসলিম তারা বিশ্বাস করতে পারে যে–এহেন জঘন্য কাজটা জুরাইজাই করেছে। জনতা ক্ষিপ্ত হওয়া যুবরাজকে মারধর করতে শুরু কর। শুধু তা-ই নয়, জুরাইজেশন যে নেতা এক ধ্যানে ওয়ার্ক ইবাদত করতো, সেই ঘরগুলোকে তারাই গুঁড়িয়ে দিলো।
উদ্দেশ্য করে যখন শিশুর জন্য শিশু আনা, তখন তাকে দেখতে বললেন, আমাকে তোমরা দেখতে পাবে। আমি আমার রাবের কাছে প্রার্থনা করতে চাই।
যুগযুরকে সময় দেওয়া। প্রার্থনা শিশু সন্তানের উদ্দেশ্য করে ইউজারেজ বললেন, 'বলো, কে তোমার বাবা?'
কী অপার হিমা, সদ্য শিশুটা সকলের সতর্ক বলে উঠলো, 'আমার বাবার নাম অমুক। আর অমুক জায়গায় সে মেষ চরায়।'
কোয়েলের শিশুর এহেন প্রকাশক বিস্ময়ভিভূত হতে পারে! বিশ্বতাজুরের স্মিক নিয়ে, তার আমল-ইবাদত নিয়ে যে সন্দেহ হলে তাদের মনে হয়, তা সাথে উবু হয়ে যায়। তারা ইউজারেজের কাছে বেশ অনুপস্থিত এবং তার প্রার্থনার ঘরের মাটির পক্ষে স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করতে চান; কিন্তু সে প্রস্তাবে যুজুর শক্তি না। তিনি বললেন, 'তার প্রয়োজন নেই। আমার ঘরটা আগে যেমন। বিশেষভাবে, কিছুটা অংশই আমার জন্য যথেষ্ট।'[7]
হাদিসটা এখানেই শেষ হয়। এই যে ভয়ংকর নেককার বান্দা ইউজারের এই বিপর্যয় দেখালো, এটা কেন হয়েছিল? আমার জন্য ডাকে না দেওয়া তার মা তারিখের তালিকাভরে ওয়ার্কের কাছে এই কারণ বদ-দুআ রাত। তার মা আল্লাহকে বলেছেন, কোনো পতিতার মুখ না প্রকাশের কারণে জুরেজের মৃত্যু না দেন। আল্লাহ সুবনাহু ওয়া তাআলা জুরহাউজের সেই দুআ কবুল। যুগের যুগের মতো নেকার, আমদার বান্দাকে তিনি ঠিকই পুতার করেছেন এবং তাকে ঘেষ করেছেন সামরিক লাঞ্ছনার। ইজার্জুর কেবলার্গতির মগ্ন থাকতেই বলে তার মিউ ডাকে সাড়া দিতে পারেন এবং সেই কারণে এত কঠিন অবস্থা তার হতে হয়েছিল। শাইখ মাজিদ প্রশ্ন করেছেন- আমরা যারা মোবাইলে বুদ আবদুল গঠনে হাজির হয়েছি, আমরা কয়েকটা কথা বলেছি, আমরা কেউ কথা শুনি না, ইন্টারনেটের সামনে দাঁড়িয়ে, আমাদের মিলন যদি আমাদের জন্য কোনো বদ-দুআ করেন, তাহলে ভাবুন তো, কেমন নারী অবস্থার গান। হতে হবে আমাদের?
মিউ অধ্যয় যারা, তারা সত্যিকার অর্থেই ভাগাভাগি। তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় শান্তি। জীবনের কোনো না কোনো তারা নিদারুন শুরু হবে। আর আখিরাতে প্রশ্নতা তো আছেই। তাই, আমাদের বারংবার ভাগার কারণ আমাদের নির্ন্তর হেরে যাওয়ার কারণে সম্ভবত এখানেই লুকোনো। দেখতে দেখতে, আমাদের মাঝে কোন অবস্থানে আছেন।
চার.
আজকালকার দুনিয়ায় 'ভাল্লাগেনা' একটা রোগের নাম হয়েছে। আমাদের চারপাশে তাকালে আমরা এমন এক হাজার লোকের বিবর্তন পাবো, যারা জীবন নিয়ে কথা বলবেন। এমন নয় যে, তাদের অর্থকড়ি, প্রভাব-প্রতিপত্তির নাম-যশ-বিখ্যাত সন্দেহ। তাদের কোনো কিছুর অভাব নেই। তাদের জন্য আছে, তবু থেকেও অনেক কিছু নেই। তাদের জন্য অনেক বড় শূন্যতা বিরাজ করে! প্রাপ্তিতে ভরে ওঠা তাদের জীবনপাতাটা স্থানের এক অদৃশ্য অপ্রাপ্তির আনা গোনা। আচ্ছা, কেন এমন হয়?
কখনো কি জীবন থেকে পালাতে মন চায় আপনার? চারিদিকে হাহাকার করে মন? সামরিক মর্মীড়ায় প্রাচীর হৃদয়ের অংশ টুকরো টুকরো হয়ে যায়? দুনিয়াকে বিষাক্ত পাতা? কবির মতন বলতে মন চায়, 'জন্মই আমার আজন্ম পাপ?'
কখনো কি আসে, কেন আপনি তৃপ্তি চিত্রন না? অনেক থেকেও কেন তোমার কিছু নেই? কেন আপনি আপনার মন না? একজীবনে পরিতৃপ্তির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সবটাই তো আপনার কাছে আছে, তাবু কেন আপনি আপনার কাছে একাকী? আপনি সতর্ক জানেন, আপনার এই দুর্বিষহ জীবনের পথ চলার কারণ। ঠিক কোন কারণে আপনার ভরা বাসন্তী-জীবনে যাতানার প্লাবন, তা আপনার কাছে অজানা; তবে আপনার এই অজ্ঞাত, অনির্ণয় দুঃখ-ভারাক্রান্ত জীবনের কারণ সম্ভবত আমি জানি। আপনাকে উদ্দেশ্য করে সম্ভবত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন-
'আর যে প্রকাশ আমার তার থেকে বিস্মৃতি হবে, জীবন সংকুচিত হবে।'[8]
আয়াতের সাথে আপনার জীবনের কি কোনো মিলন চিত্র? এই পরিবেশ হাকার, অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি এবং গভীর ভুলতা– আপনি যে ঘোষণা থেকে বিদায়ের কারণ সম্ভবত আপনার মনের জীবন শূন্য। একটি সতর্কতা অবলম্বন করতে-লাইফের প্রতিটা ক্ষেত্রে সতর্কতা অনুসরণ করে অনুসরণ করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যা আপনার জন্য হালাল করেছেন, তা গ্রহণ করা এবং যা-কিছু তিনি হারাম করেছেন, তা এ-প্রকাশ করেছেন। যেভাবে আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহকে ভালোবাসার নামই ওয়ার্ক করা।
উদাহরণ বিবেচনা আরো সহজ হবে। আপনি যদি কোনো বড় কর্মকর্তা থাকেন, আপনি আপনার সমর্থনে সমর্থন করেন এবং নেতা হয়ে থাকেন। তাই আপনি এখানে স্বাচ্ছাপ্রণোদিত হতে পারেন অথবা কোনো জালিয়ার সুযোগ দিতে পারেন।
সাধারণভাবে মেধা ও যোগ্যতার মানই হয়। আপনার আরও অফিসের সামনে কথা। কিন্তু একজন চৌধুরি সাহেব, যার আবার পকেটভর্তি, টাকা আপনার হাতে নিয়ে দুয়েক তাকে একটা বান্ডিল দিয়ে বললেন, 'মুক আর অমুক আমার লোক। লাই অমুক অমুক পোস্টে বসিয়ে'
যে মেরে পোস্টে চৌধুরি সাহেবের বসিয়ে লোকেদের জন্য বায়না করার সুযোগ এসেছে, সে পোস্টের জন্য জমা দেওয়ার জন্য কোনো ভোটার হাজার হাজার, কিন্তু কিছুর জন্য তোয়াক্কা না করে, একটা লোকের পরীক্ষা আপনার সকলকে পরীক্ষা করার জন্য আপনি প্ল্যাগ বাদ দিয়ে এলাকান ছুঁয়েছেন। আপনার পকেটে আপনাকে নগদ দুই তিনটা জন্যে নির্বাচনে, সেতু আর কোনো দিকে তাকানোর সময় আপনার কি আছে? চুলোয় নতুন ও স্বচ্ছতা আর!
আরো বলেন, সেই দুই টাকা দিয়ে আপনি কুর্বানির ঈদের জন্য একটি ই-ইয়া-য়া সাইজ গরু কিনলেন। আপনার কেনা গরুর সাইজ পাড়া-মল্লায় তো হৈহৈ-রৈরৈ অবস্থা! এত বড় গরু দিয়ে এই তল্লাটে আগে কেউ আর কুরবানি দিতে পারে। আপনি প্রথম!
চারদিক যখন আপনার সক্ষমতা আর বন্ধ করে এত বড় নজির স্থাপনের ভূয়সী প্রশংসায় মাওয়ারা, আপনার অন্তরে তখন কিন্তু আনন্দ চিটেফোঁটাও নেই। কারণ আপনি আপনার অর্জিত টাকা কোনো হালাল নয়। আপনি জালিয়াতি ও প্রতারণা করে এই টাকা লাভ করেছেন। আপনি অনেকগুলো মানুষের সমস্যা নষ্ট করেছেন আর ধূলিসাৎ করেছেন অনেকগুলো মানুষের স্বপ্ন। আপনি একজন ঠগ, প্রতারক আর জালিয়া। আর কেউ না জানুক, আর কেউ না দেখুক, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তো জানেন আপনি এই অসতোর অনুভব করছেন। ইউর দুনিয়া আপনাকে যতই মুত্তাকি, যতই পরহেযগার, ততই হৃদয়বান না কেন, প্রশ্ন আপনি অসৎ ও জালিম ছাড়া আরক নন। তাই, হালাল টাকায় একটা বকরি কুর্বানি দিয়ে একজন মুমিন যে প্রস্ততি পুলক করে, দুই লাখ টাকায় বড় সমাজ আপনি তার ধূলিকণা তৃপ্তিও পাবেন না। সেই পুলক আপনাকে আপনাকে না। আপনার হৃদয়ে নেই কোনো স্থিরতা, নেই কোনো প্রশান্তি।
এই যে– তোমার সবই আছে। একটি বড় কোম্পানির হর্তা আপনি, কত লোক আপনার অধীনস্থ, বড় অঙ্কের টাকা মাসে টাকা বেতন পান আপনি, কী বড় সাইক্যাগার দিয়ে কুর্বা করেন, বছরের উমরাটাও আশঙ্কা-বাদ যায় না। এতসব করেও অন্তরে কেন শান্তির লেশমাত্র পান না? কারণ আপনি বিচ্যুত থেকে বিচ্যুত। আল্লাহ তায়ালা আপনি যাহাতে আছেন আগাগোড়া। আপনার সব থাকবে-উন্নতি, পদোন্নতি, বাড়ি আর গাড়ি। কিন্তু যা থাকবে না, তা অন্তরের প্রশান্তি। এইটার জন্য বিবাদ উঠবে আপনার জীবন। বিষিয়ে উঠবে আপনার দেহমন। এক অদৃশ্যতানার সাগরে ডুবে থাকবেন আপনি। আপনার দালানকোঠা শঙ্কাজনক আকাশ ছোঁবে, আপনার ক্ষমতা বলয় শঙ্কাজনকভাবে বিস্তৃত হবে, নাম-যশ-নিঃসৃত শঙ্কা সীমানা ছড়িয়ে যাবে, কিন্তু অন্তরের অন্তরে পুড়ে নিঃশেষ হতে পারবেন।
এটা শুধুমাত্র একটি উদাহরণ। জীবনের পদে পদে, ব্যক্তি সামাজিক সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতি ক্ষেত্রে আমাদেরকে ভয়ভীতি হৃদয়ে অটুট রাখতে হবে। জীবনের প্রতিটা অলিতে-গলিতে আমাদের চলতে হবে হুকুম-আহকাম; তবেই আমরা জীবন লাভ করতে পারবো, নচেৎ আমাদের জীবন বিভীকময় হয়ে উঠবে নাকো। আমরা হারিয়ে ফেলবো জীবন ছন্দ। ভয়ঙ্কর স্পট থেকে বিচ্যুত হলে আমাদের জীবনকে কঠিন করে তুলবে আর নিরানন্দ করে আমার জীবন।
পাঁচ.
জীবন গোলকধাঁধায় আমরা ভিতরেই পথ হারাই। চারিত্রিক যোগদান শূন্যতাবোধে যখন হাহাকার করে মনে, যখন জীবন খুঁজে পায় না জীবনে, তখন জীবন থেকে এক টুরো ছুটি নিয়ে আমরা নিজেকে খুঁজতে বসি। ভাবতে বসি–কোথায় গিয়ে ঠিকই হারাচ্ছেন? হুমায়ূন আহমেদের শব্দ- 'আপনাকে আমি খুঁজিয়া বাডই'। আপনাকে সেই, অন্য নিজেকে খুঁজে পেতে হলে, খুঁজে পেতে হলে জীবনে সত্যিকারের মধ্যে, আমাদের ফিরতে হবে আমাদের রাবের পথ। সেই পথ, যে পথ মিশেছে অনন্ত অসীমে।
———-
[১] সুরা আরাফ, আয়াত : ১৭২
[২] সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৫৯
[৩] সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫
[৪]এতে সালাতের পড়তে হয় না। কেবলমাত্র সালাতের মান পালিত হয়।
[৫] প্রাগুক্ত
[৬] সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৩২
[৭] সহিহুল বুখারি : ১২০৬; সহিহ কমিউনিটি: ২৫৫০; মুস্তাখারাজু আবি আওয়ানা : ১১১২১; শুবুল তথ্য : ৭৪৯৪
[৮] সুরা তা-হা, আয়াত : ১২৪
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন